Subscribe For Free Updates!

We'll not spam mate! We promise.

Saturday 15 November 2014

০১ম খণ্ড » ০৪. সরল রাজযোগ » ০৩. তৃতীয় পাঠ

কুন্ডলিনী। আত্মাকে জড় ব’লে জানলে চলবে না, তার যথার্থ স্বরূপ জানতে হবে। আমরা আত্মাকে দেহ ব’লে ভাবছি, কিন্তু একে ইন্দ্রিয় ও চিন্তা থেকে পৃথক্ ক’রে ফেলতে হবে; তবেই আমরা উপলব্ধি করতে পারবো যে, আমরা অমৃতস্বরূপ। পরিবর্তন মানেই কার্যকারণের দ্বৈতভাব; আর যা কিছু পরিবর্তনশীল, তাই নশ্বর। সুতরাং দেহ বা মন অবিনাশী হ’তে পারে না, কেন না তারা সর্বদা পরিবর্তনশীল। যা অপরিবর্তনীয়, একমাত্র তাই অবিনাশী; কারণ তার উপর ক্রিয়া করতে পারে, এমন আর কিছু নেই।

আমরা সত্য-স্বরূপ হয়ে যাই না, চিরকালই আমরা সেই সত্যস্বরূপ। কিন্তু যে অজ্ঞানের অবগুন্ঠন আমাদের কাছ থেকে সত্যকে লুকিয়ে রেখেছে, তা সরিয়ে দিতে হবে। দেহ হচ্ছে চিন্তার বাহ্য বস্তুগত রূপ। সূর্য(পিঙ্গলা) চন্দ্রের(ঈড়া) গতি দেহের সর্বাংশে শক্তিসঞ্চার করছে; অবশিষ্ট শক্তি মেরুদন্ডের(সুযুম্নার) অন্তর্গত বিভিন্ন চক্রে-সাধারণ ভাষায় স্নায়ুকেন্দ্রে সঞ্চিত থাকে। এই গতিগুলি মৃতদেহে দেখা যায় না, কেবল সুস্থ সবল শরীরেই থাকে।

যোগীর এই সুবিধা-তিনি যে শুধু এগুলি অনুভব করেন তা নয়, সত্য সত্যই এগুলি দেখতেও পান। এগুলি প্রাণবন্ত, জ্যোতির্ময়; চক্রগুলিও ঠিক তাই।

কার্য সাধারণতঃ চেতন ও অচেতন-এই দু প্রকার। যোগীদের আর এক প্রকার কর্ম আছে, সেটি অতিচেতন; এটিই হচ্ছে সর্বদেশে সর্বকালে সমস্ত আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মূল উৎস। সহজাত জ্ঞানের ক্রমবিকাশই আমাদের পূর্ণতার দিকে নিয়ে যায। অতিচেতন অবস্থায় কোন ভুল হয় না; কিন্তু সহজাত জ্ঞান পূর্ণতা প্রাপ্ত হলেও তা নিছক যান্ত্রিক, কারণ এ স্তরে সজ্ঞান ক্রিয়া থাকে না। একে ‘প্রেরণা’ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু যোগীরা বলেন, ‘এই শক্তি প্রত্যেক মানুষেরই মধ্যে আছে’, কালে সকলেই এই শক্তির অধিকারী হবে।

চন্দ্র ও সূর্যের (ঈড়া ও পিঙ্গলা) গতিকে একটা নতুন দিকে নিয়ে যেতে হবে, অর্থাৎ মেরুদন্ডের মধ্য দিয়ে তাদের জন্য একটা নতুন পথ খুলে দিতে হবে। যখন এই ‘সুষুম্না’-পথ দিয়ে তাদের গতি সহস্রার পর্যন্ত পৌঁছবে, তখন কিছুক্ষণের জন্য আমাদের দেহজ্ঞান একবারে চলে যাবে।

মেরুদন্ডের নিম্নদেশে যে ‘মূলাধার-চক্র’ আছে, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই স্থানটি হচ্ছে প্রজনন-শক্তিবীজের আধার। একটি ত্রিকোণ-মন্ডলে একটি ছোট সাপ কুন্ডলী পাকিয়ে আছে-যোগীরা এই প্রতীকে একে প্রকাশ করেছেন। এই নিদ্রিত সর্পই কুন্ডলিনী, এর ঘুম ভাঙানোই হচ্ছে রাজযোগের একটিমাত্র লক্ষ্য।

পাশব কার্য থেকে যে যৌনশক্তি উত্থিত হয়, তাকে ঊর্ধ্বদিকে মানবশরীরে মহাবিদ্যুদাধার মস্তিষ্কে প্রেরণ করতে পারলে সেখানে সঞ্চিত হয়ে তা ‘ওজঃ’ বা আধ্যাত্মিক শক্তিতে পরিণত হয়। সকল সৎ চিন্তা, সকল প্রার্থনা ঐ পশুশক্তির কিছুটা ওজঃশক্তিতে পরিণত ক’রে আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তিলাভে সাহায্য করে। এই ‘ওজস্’ হচ্ছে মানুষের মনুষ্যত্ব, একমাত্র মনুষ্যশরীরেই এই শক্তি সঞ্চয় করা সম্ভব। যার ভেতরে সমগ্র পাশব যৌনশক্তি ওজঃশক্তিতে পরিণত হয়ে গেছে, তিনি একজন দেবতা। তাঁর কথায় অমোঘ শক্তি, তাঁর কথায় জগৎ নবজীবন লাভ করে।

যোগীরা মনে কল্পনা করেন যে, এই কুন্ডলিনী সর্প সুষুম্না-পথে স্তরে স্তরে চক্রের পর চক্র ভেদ ক’রে সহস্রারে উপনিত হয়। মনুষ্যশরীরের শ্রেষ্ঠ শক্তি যৌনশক্তি যে পর্যন্ত না ওজঃশক্তিতে পরিণত হয়, সে পর্যন্ত নারী বা পুরুষ কেউই ঠিক ঠিক আধ্যাত্মিক জীবন লাভ করতে পারে না।

কোন শক্তিই সৃষ্টি করা যায় না; তবে তাকে শুধু ঈপ্সিত পথে চালিত করা যেতে পারে। অতএব যে বিরাট শক্তি এখনই আমাদের অধিকারে আছে, তাকে আয়ত্ত করতে শিখে, প্রবল ইচ্ছাশক্তির দ্বারা ঐ শক্তিকে পাশব হ’তে না দিয়ে আধ্যাত্মিক ক’রে তুলতে হবে। এইভাবে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, পবিত্রতাই সর্বপ্রকার ধর্ম ও নীতির ভিত্তি। বিশেষতঃ রাজযোগে কায়মনোবাক্যে সম্পূর্ণ পবিত্রতা অপরিহার্য; বিবাহিত বা অবিবাহিত-উভয়ের পক্ষে একই নিয়ম। দেহের সর্বাপাক্ষা শক্তিশালী বস্তুর যে অপচয় করে, সে কখনও আধ্যাত্মিক জীবন লাভ করতে পারবে না।

ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, সর্বযুগের বড় বড় সত্যদ্রষ্টা ব্যক্তিগণ হয় সাধুসন্ন্যাসী, না হয় তাঁরা বিবাহিত জীবন ত্যাগ করেছেন। যাঁদের জীবন পবিত্র, কেবল তাঁরাই ভগবানের দর্শন পান।

প্রাণায়ামের পূর্বে ঐ ত্রিকোণ-মন্ডলকে ধ্যানে দেখবার চেষ্টা কর। চোখ বন্ধ ক’রে এর ছবি মনে মনে স্পষ্টরূপে কল্পনা করবে। ভাবো, এর চারপাশে আগুনের শিখা, আর তার মাঝখানে কুন্ডলীকৃত সর্প ঘুমিয়ে রয়েছে। ধ্যানে যখন এই কুন্ডলিনীশক্তি স্পষ্টভাবে দেখতে পাবে, তখন কল্পনায় তাকে মেরুদন্ডের মূলাধারে স্থাপন কর; কুম্ভক-কালে শ্বাস রুদ্ধ রাখার সময় (সুপ্ত) কুন্ডলিনীকে জাগাবার জন্যে ঐ রুদ্ধ বায়ু সবলে তার মস্তকে নিক্ষেপ করবে। যার কল্পনা-শক্তি যত বেশী, সে তত শীঘ্র ফল পায়, আর তার কুন্ডলিনীও তত শীঘ্র জাগেন। যতদিন তিনি না জাগেন, ততদিন কল্পনা কর-তিনি জেগেছেন। আর ঈড়া ও পিঙ্গলার গতি অনুভব করবার চেষ্টা কর, জোর ক’রে তাদের সুষুম্না-পথে চালাতে সচেষ্ট হও। এতে কাজ খুব তাড়াতাড়ি হবে।

Socializer Widget By Blogger Yard
SOCIALIZE IT →
FOLLOW US →
SHARE IT →

0 comments:

Post a Comment